✍️ গল্প:
অনেক বছর আগের কথা। একটি দূর গ্রামের ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে জন্ম নেয় একটি শিশু, নাম রাখা হয় রফিকুল। শৈশব থেকেই দারিদ্র্য ছিল তার ছায়াসঙ্গী। বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিনী। প্রতিদিন এক বেলা খাবার জোটানোই ছিল পরিবারটির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
রফিকুল যখন একটু বড় হয়, তখনই সে বুঝতে শেখে জীবন মানেই সংগ্রাম। স্কুলে যাওয়ার খরচ ছিল বিলাসিতা। তবুও, পুরোনো বই আর প্রতিবেশীর ছেঁড়া খাতায় সে অক্ষরজ্ঞান অর্জন করে। কচি হাতে কলম তুলে নেয়, আর হৃদয়ে গেঁথে নেয় এক স্বপ্ন—মানুষের জন্য কিছু করবে।
স্কুল শেষ করার পর শহরে চলে আসে রফিকুল। কাজ নেয় একটি হোটেলে। সেখানে বাসন মেজে, ফ্লোর মুছে, কখনো আবার বাজার করে হোটেল চালাতো। দিনশেষে যে কয় টাকা পেত, তার কিছু পাঠিয়ে দিত মায়ের জন্য, আর বাকিটুকু জমিয়ে রাখত পড়াশোনার জন্য।
রাতের আঁধারে যখন শহর নিস্তব্ধ হয়ে যেত, তখন সে গ্যাস লাইটের নিচে বসে বই পড়ত। ক্লান্ত চোখে, নিস্তেজ শরীরে, তবুও চোখেমুখে ছিল অদম্য সাহস। কেউ বিশ্বাস করত না, এই ছেলেটা একদিন কিছু হয়ে উঠতে পারবে।
বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে রফিকুল ভর্তি হয় একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজ খরচে, নিজের পরিশ্রমে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। তার জীবন কখনো সহজ হয়নি, কিন্তু সে কখনো হার মানেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে সে সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করে। গড়ে তোলে একটি এনজিও, যার মাধ্যমে গ্রামের অসহায় মানুষদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেয়।
রফিকুল আজ অনেক বড় মানুষ। কিন্তু সে ভুলে যায়নি নিজের অতীত। যখনই কেউ তার কাছে সাহায্য চাইতে আসে, সে বলে—
"আমি জানি কষ্ট কাকে বলে। আমি জানি না খেয়ে ঘুমাতে কেমন লাগে। তাই যতটুকু পারি, আমি মানুষের পাশে থাকতে চাই।"
তার জীবন আমাদের শেখায়, মহাপুরুষ জন্ম নেন না, গড়া হয় কষ্ট, অধ্যবসায় আর নীতির ভিতের উপর।
0 Comments