একটা ছোট শহরের অদূরে একটি গ্রামে ছিল রাফির বাড়ি। রাফি ছিল একজন মেধাবী, পরিশ্রমী ও সৎ ছেলে। তার বয়স ছিল মাত্র বারো, কিন্তু তার চিন্তা-ভাবনা ও ব্যবহার ছিল অনেক বড়দের মতো। গ্রামের সবাই তাকে খুব ভালোবাসত। স্কুলের শিক্ষক, প্রতিবেশী এমনকি বাজারের দোকানদাররাও বলত— "রাফির মতো ছেলে যদি সবার হতো!"
রাফির পরিবার খুব ধনী ছিল না। তার বাবা একজন কৃষক এবং মা গৃহিণী। তারা খুব কষ্ট করে সংসার চালাতেন। কিন্তু রাফি কখনো তাদের মুখে বিরক্তির ছাপ দেখায়নি। সে ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সকালে উঠে গরু-ছাগলকে খাওয়ানো, মাকে রান্নায় সাহায্য করা, বাবার সঙ্গে ক্ষেতের কাজ—সব কিছুতেই তার অংশগ্রহণ ছিল। তবুও সে কখনো পড়ালেখায় অবহেলা করত না।
স্কুলে রাফি ছিল ক্লাসের প্রথম। শিক্ষকরা বলতেন, "রাফির মতো মনোযোগী ছাত্র পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।" সে শুধু নিজের পড়ালেখাতেই মন দিত না, বন্ধুদের পড়াশোনাতেও সাহায্য করত। কোনো ছাত্র ক্লাসে কিছু বুঝতে না পারলে রাফিই প্রথম এগিয়ে আসত।
একবার স্কুলে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। রাফিকে তার স্কুল থেকে প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠানো হয়। গ্রামের সাধারণ ছেলে হয়েও সে শহরের নামীদামী স্কুলের ছাত্রদের হারিয়ে প্রথম হয়। তার জ্ঞান, যুক্তি আর আত্মবিশ্বাস দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। পুরস্কার গ্রহণের সময় সে বলে— "এই পুরস্কার আমি আমার বাবা-মাকে ও আমার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উৎসর্গ করছি। আমি তাদের জন্যই আজ এখানে দাঁড়াতে পেরেছি।"
রাফির সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তার সততা। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে সে রাস্তার ধারে একটি ব্যাগ খুঁজে পায়। ব্যাগের ভিতর ছিল মোবাইল, কিছু টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। রাফি সেটা সরাসরি স্থানীয় থানায় জমা দেয়। পরে পুলিশ সেই ব্যাগ প্রকৃত মালিকের হাতে তুলে দেয়। মালিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাফিকে পুরস্কার দিতে চায়, কিন্তু রাফি বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করে বলে, "আমি যা করেছি, তা একজন আদর্শ নাগরিকের কর্তব্য।"
রাফির জীবনটা ছিল সত্যিকারের অনুপ্রেরণার মতো। সে কখনো খারাপ পথে হাঁটে না, সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকে। তার স্বপ্ন ছিল একদিন বড় হয়ে একজন সৎ সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার, যাতে সে দেশের জন্য কাজ করতে পারে। তার বিশ্বাস ছিল— "সত্য ও পরিশ্রম কখনো ব্যর্থ হয় না।"
এইরকম একজন রাফির গল্প আজও গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ফেরে। সে আজও সবার কাছে এক আদর্শ ছেলের প্রতীক।
0 Comments